চার বিবি বৈধ!
কোরানে চার বিবি বৈধ (বিয়ের আওতা) ।
জবাব:
১. অইন খিফতুম…তা’উলু [৪: নিছা-৩]।
অর্থ: তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, এতিমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ করবে নারীদের মধ্য থেকে যাকে তোমাদের ভালো লাগে, দুই, তিন অথবা চার; আর যদি আশঙ্কা কর যে, সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত একজন দাসীকে এতে পক্ষপাতিত্ব না করার অধিকতর সম্ভাবনা।
তৎকালীন মুসলিমগণ নবীর নেতৃত্বে একের পর এক যুদ্ধ জয়ের মধ্যে অসংখ্য নারীও বন্দী হয়। যাদের পিতামাতা, স্বামী সকলেই মুছলিমদের হাতে নিহত বা বন্দী হয়। অপরদিকে অসংখ্য মুসলিম নারীগণও তাদের স্বামী, মাতা-পিতা তথা অভিভাবক হারায়। উল্লিখিত কোরানের ভাষায় এরা সকলেই এতিম। একমাত্র ঐ সকল অসহায় এতিমদের ব্যাপারেই বর্ণিত আয়াতে বিয়ের নির্দেশনামা।
তৎকালীন যুদ্ধের নিয়ম মোতাবেক যুদ্ধলব্ধ অন্যান্য সম্পদের মতোই এতিম বা অধিকৃতদের সহায়-সম্পদসহ তাদের নিরাপত্তার জন্য সমাজের ক্ষমতাধর কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে বণ্টন করা হতো, যেহেতু তখন কারাগারের সুব্যবস্থা ছিল না। এদের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব, নিরাপত্তাসহ যৌন-ভোগেরও অধিকার ছিল। কিন্তু স্ত্রীর মর্যাদা দেয়া হতো না। দেখুন:
২. অইয়াস্তাফতুনাকা…আলীমা। [৪: নিছা-১২৭]।
অর্থ: এবং লোকেরা তোমার নিকট নারীদের বিষয় জানতে চায়, বল! আল্লাহ তোমাদিগকে তাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা দিয়েছেন। এতিম নারী সম্বন্ধে যাদের প্রাপ্য তোমরা প্রদান কর না অথচ তোমরা তাদের ভোগ করছো এবং অসহায় শিশু ও এতিমদের প্রতি তোমাদের ন্যায্য বিচার সম্বন্ধে কেতাবে যা বিধিবদ্ধ হয়েছে, তার ওপর কায়েম থাকো। যে কোনো সৎ কাজ তোমরা করে থাকো আল্লাহ তা জানেন।
এসমস্ত বিবিধ কারণে নব্য মুসলিমগণ সীমাহীন ও অবাধ নারী ভোগের সুযোগ পায়। ফলে সামাজিক ও রাজনৈতিক চরম অবক্ষয়ের আশঙ্কায় একটি কঠিন শর্তের অধীনে (সমব্যবহার) উল্লিখিত ঐ এতিম নারীদের মধ্য থেকে ২, ৩ বা ৪ জনকে বিয়ে করার অধিকার দিয়ে তাদের স্ত্রী-মর্যাদা প্রদান করত সীমাহীন অত্যাচার, যৌনাচার সুকঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
বিধানটি সাধারণের জন্য অবশ্যই নয়। বরং বিশেষ কাল, বিশেষ অবস্থায় একমাত্র অসহায়, এতিম নারীদের অধিকারী পুরুষদের জন্য একটি বিশেষ বিধান। যা এক্ষণে অমুসলিমগণও এক বাক্যে স্বীকার করবেন যে, বিধানটি মূলেই মহৎ ও সাম্যবাদী। অথচ আয়াতটির অপ-ব্যাখ্যা করে আদিকাল থেকেই অমুছলিম সমাজে কোরান ও মহানবীকে অশ্লীল বিতর্কে জড়িয়েছে; যদিও ইউরোপ, আমেরিকানগণ যৌন বিষয়ে পশুর মতোই উদার কিন্তু একমাত্র রাষ্ট্রনেতাদের ক্ষেত্রে অসীম ব্যতিক্রম।
সাধারণত চার বিয়ে পর্যন্ত ফরজ বা বৈধ হয় কিভাবে! বরং তা বিশেষ ক্ষেত্রে ‘আনফাল’; ‘নফল’ শব্দের বহুবচন, অর্থাৎ অতিশয় অতিরিক্ত।
অতএব মুসলিমগণ আবার যদি কখনও কোনো নবীর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে অসহায় নারীদের বন্দিনী করতে সক্ষম হয়! মুসলিমগণ নারীগণ যদি স্বামী ও পিতামাতা হারিয়ে এতিম অবস্থায় বন্দী হয়; অতঃপর যে সকল সৈন্য ও সমাজপতিগণ, যারা ঐ এতিমদের লালন-পালনের অধিকারপ্রাপ্ত হবেন কেবল মাত্র তারাই শর্তের মধ্যে ২, ৩ বা ৪ জন করে বিবি গ্রহণের সুযোগ পাবেন, সাধারণ ক্ষেত্রে একজনের বেশি নয়।
কোরানে পতিতা নারীর যেমন সমর্থন নেই, পতিত পুরুষ হওয়ারও কোনো বিধান নেই; কোরান প্রাকৃতিক ও নিখুঁত সাম্যবাদের।
আয়াতটির প্রথম অংশ পুনঃ লক্ষণীয় যে, ‘-এতিম নারীদের প্রতি সুবিচার করতে না পারলে নারীদের মধ্য থেকে পছন্দমতো অনুর্ধ্ব ৪ জন বিয়ে করতে পার-, পুনঃ বলা হয়েছে, ‘সুবিচার করতে না পারলে একজন-।’
এতিম নারীদের প্রতি সুবিচার করতে না পারলে অন-এতিম স্বাধীনা ৪ জন নারী ইনসাফের মাধ্যমে বিয়ে করার যুক্তি অযৌক্তিক এবং প্রকাশ্যে বে-ইনসাফী। আয়াতটির বিষয়বস্তু একমাত্র এতিম ও দাসী বিয়ে সম্পর্কে; সাধারণ বা স্বাধীনা নারীদের বিষয় তিল পরিমাণ আকার-ইঙ্গিতও সেখানে নেই। অতএব বিশেষ কারণ ছাড়া সাধারণত একাধিক বিয়ের কল্পনাও অবৈধ। সাধারণ নারীগণ এতিম-দাসীদের মতো অসহায়, পরাধীন বা পণ্য নয় যে, চাইলেই বিয়ে করা যায়, তাদের সম্বন্ধে নিম্নেই ৪ ও ৫ নং ধারায় বর্ণিত আছে; সুতরাং প্রচলিত বিধান অপ্রাকৃতিক, অসামাজিক এবং অশ্লীল স্বার্থ প্রণোদিত।
পুনশ্চ: আয়াতে প্রয়োজনবোধে একটি স্ত্রী সংসারে বহাল রাখার জন্য ২য়, ৩য় অথবা ৪র্থ বার পর্যন্ত বিয়ে করতে পারবে অথবা অনুর্ধ্ব মোট ৪ জন স্ত্রী একসঙ্গে বহাল রাখতে পারবে তার কোনোটাই স্পষ্ট না থাকলেও প্রথমটি যে যুক্তিসঙ্গত তা আয়াতটির শেষ অংশে সাক্ষ্য বহন করে; তবে পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এই ব্যতিক্রমধর্মী বিধানটি তৎকালীন অধিকৃত ‘এতিম ও দাসীদের’ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল; কিন্তু আজ আর সে এতিম বা ক্রীতদাসীদের অস্তিত্ব নেই; সুতরাং ৪ স্ত্রী গ্রহণেরও সুযোগ নেই!