ব্যভিচার প্রমান করতে ৪ জন সাক্ষী লাগে

ব্যভিচার প্রমান করতে কি ৪ জন সাক্ষী লাগে ?

জবাব:

ব্যভিচারের উপর কোরআনে মূলত তিন ধরণের আয়াত আছে।

‪কেস১‬:

“ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত কর। আল্লাহর বিধান কার্যকর কারণে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সূরা আন-নূর ২৪:২)

এই আয়াতে সাধারণভাবে নারী-পুরুষ ব্যভিচারের কথা বলা হয়েছে। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এখানে কোনো সাক্ষী-প্রমাণের কথা বলা হয়নি, অথচ একশ’ করে বেত্রাঘাত করার কথা বলা হয়েছে। তাহলে সাক্ষী-প্রমাণ ছাড়া কেউ ব্যভিচার করেছে কি-না সেটা কী করে জানা যাবে? এটা জানা তখনই সম্ভব যখন কেউ নিজে থেকেই ব্যভিচারের কথা স্বীকার করবে কিংবা প্রকাশ্যে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে।

কেস২‬:

“যারা সতী-সাধ্বী নারীর প্রতি অপবাদ আরোপ করে অতঃপর স্বপক্ষে চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করে না, তাদেরকে আশিটি বেত্রাঘাত করবে এবং কখনও তাদের সাক্ষ্য কবুল করবে না। এরাই না’ফারমান।” (সূরা আন-নূর ২৪:৪)

এই আয়াত অনুযায়ী কেউ যদি একজন সৎ নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করে তাহলে তাকেই (অপবাদকারীকে) চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করতে হবে। অপবাদকারী যদি চার জন পুরুষ সাক্ষী উপস্থিত করতে না পারে তাহলে উল্টোদিকে তাকেই আশিটি বেত্রাঘাত করার কথা বলা হয়েছে, এবং এও বলা হয়েছে যে তার সাক্ষ্য কখনো কবুল করবে না। অর্থাৎ আয়াতটি পুরোপুরি নারীদের পক্ষে যাচ্ছে।

কেস৩‬:

“আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চার জন পুরুষকে সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিষ্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন।” (সূরা আন নিসা ৪:১৫)

এই আয়াতে নারী-নারী (সমকামী) ব্যভিচারের কথা বলা হয়েছে। কেউ যদি দু’জন নারীর প্রতি ব্যভিচারের অপবাদ আরোপ করে কিংবা তাদেরকে ব্যভিচারিণী বলে সন্দেহ করে তাহলে তাকেই (অপবাদকারীকে) চার জন পুরুষ সাক্ষী হাজির করতে হবে। কিন্তু আমরা সকলেই জানি যে, ব্যভিচারের মতো কাজ চার জন পুরুষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে ঘটা অত্যন্ত অস্বাভাবিক। একমাত্র নির্বোধ কিংবা মাতাল ছাড়া কেউই চার জন পুরুষ সাক্ষীর উপস্থিতিতে ব্যভিচারে লিপ্ত হবে না। কাজেই এই আয়াতে উল্লেখিত শাস্তি (গৃহবন্দী) বাস্তবে প্রয়োগ হবে না বললেই চলে। তথাপি ঠিক পরের আয়াতে বলা হয়েছে, “কিন্তু যারা এরপর তওবা করে এবং সংশোধিত হয়, আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম মেহেরবান।” (সূরা আন নিসা ৪:১৭)

পাঠক নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, কোরআন নারীদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে। অথচ ভাইরাসজিৎ রায়ের মতো ‘নাস্তিক/মুক্তমনা’রূপী ছুপা হিন্দুত্ববাদীরা মুসলিম নারীদের ‘পরিত্রাতা’ (আহ্‌!) সেজে ইসলামী আইন ও কোরআনকে সম্পূর্ণরূপে নারীদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়ে ইসলামী আইনকে সতীদাহ প্রথার চেয়েও অমানবিক ও বর্বর বানিয়ে দিয়ে প্রপাগাণ্ডা চালাচ্ছে। ব্যাপারটা ইতোমধ্যে অনেকেই হয়তো জেনে গেছেন।

কোরআনের যে দুটি আয়াতে ‪ব্যভিচারের‬ কথা বলা হয়েছে (৪:১৫ ও ২৪:৪) এবং আয়াত দুটি আসলে নারীদের পক্ষেই যায়।